নিজ স্বামী বা স্ত্রী ব্যতিরেকে অন্য কারোর সঙ্গে,কিংবা অন্যের স্বামী বা স্ত্রীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক তৈরি করাকেই আমরা পরকীয়া বলে থাকি।IPC Section 497 মোতাবেক এতদিন যা অপরাধ বলেই বিবেচিত হয়ে আসছিল।কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের সাম্প্রতিক রায়ের ফলে পরকীয়া এখন আর অপরাধ নয়।27শে সেপ্টেম্বর,2018,সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ সদস্যের ডিভিশন বেঞ্চের দেওয়া এই রায়ের ফলে ব্রিটিশের তৈরি 150 বছরের পুরনো আইন বাতিল হয়ে গেলো।তবে অপরাধ না হলেও,এটা আইনসম্মতও নয়,এটাকে একটা ত্রুটি হিসেবে দেখা হবে,এবং পরকীয়ার কারণে আত্মহত্যা ঘটলে সেটাকে অপরাধ হিসেবে ধরা হবে।তাছাড়া পরকীয়া সম্পর্ক ডিভোর্সের কারণ হিসেবে বিবেচ্য হবে।
সুপ্রিম কোর্টের এই রায়ের ফলে এতদিনকার সামাজিক নৈতিকতা ও মূলবোধ সম্পূর্ণ পাল্টে গেল।চরিত্র, নৈতিকতা, মূল্যবোধ,রুচিবোধ এসবের ধারণা একরকম মূল্যহীন হয়ে গেল মনে হয়।
পারিবারিক বন্ধন শিথিল ও ভঙ্গুর হয়ে যাবে বলেও মনে হয়।পরিবার নামক প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্বের সংকট আরো বেড়ে গেলো।ভারতের চিরাচরিত পারিবারিক ঐতিহ্য ঝুঁকির মুখে এসে দাঁড়ালো।দাম্পত্য সম্পর্ক অনেক বেশি অনিরাপদ হয়ে গেল।দাম্পত্য বিচ্ছেদ হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যাবে বলে ধরে নেওয়া যায়।আর তার ফলে শিশুসন্তানদের জীবনের ট্রাজেডি বাড়বে, যা নিশ্চিতভাবেই শৈশবের সুস্থতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।শিশুর শৈশব ক্ষতিগ্রস্ত হলে সবচেয়ে ভয়ের যে ব্যাপার সেটা হল,শিশুর মধ্যে মানবিক গুণ ও অনুভূতির বিকাশ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, যা শিশুকে মানবিক হওয়ার বদলে যান্ত্রিক করে তুলতে পারে, এমনকি ভবিষ্যত জীবনে অপরাধ প্রবণতাও বাড়িয়ে তুলতে পারে।তবে সবই নির্ভর করছে পিতামাতার ভূমিকার উপর।পিতামাতা যদি সচেতন ও দায়িত্বশীল হয় তাহলে হয়তো সামাল দেওয়া গেল,কিন্তু পিতামাতা অসচেতন ও দায়িত্বহীন হলে সেটা সন্তানের জীবনে বড় বিপর্যয় নিয়ে আসতে পারে।পাশ্চাত্যের যেসব দেশে একইরকম আইন চালু আছে সেসব দেশের দৃষ্টান্ত আইনপ্রণেতারা নিশ্চয়ই যাচাই করে নিয়েছেন বলে মনে হয়।
সংসারের বুড়ো মানুষগুলোর জীবনের নিরাপত্তার বিষয়টিও ভেবে দেখার আছে।
এই আইনের আনুষঙ্গিক হিসেবে শিশু ও বয়স্ক মানুষের জন্য কিছু আইন প্রণয়ন করার দরকার আছে বলে মনে হয়,যাতে বয়স্ক মানুষের শেষ বয়সে জীবনের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত হয়,এবং শিশুদের জীবনের বিকাশ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।
এ আইনের ভালো মন্দ, সুবিধা অসুবিধা দুই দিকই আছে।
এ আইনের বলে কিছু মানুষের অবাধ লাম্পট্য করার সুযোগ যেমন বেড়ে গেল,বা আরো কিছু সামাজিক কুপ্রভাব হয়তো দেখা দেবে।
কিন্তু এই আইনই আবার কিছু মানুষের জীবনের অন্ধকারকে দূরীভূত করে তাদেরকে জীবনের অন্ধকার ও হতাশা থেকেও হয়তো মুক্তি দেবে।
তবে একথা বলতে হবে,এই আইনের দ্বারা বিচারব্যবস্থা মানুষের একান্ত ব্যক্তিগত জীবনের ক্ষেত্রে বিচার বিবেচনার কিছু দায়িত্ব হয়তো মানুষের উপর ছেড়ে দিলো,আইনের অনুশাসনের নাগপাশ বা খবরদারি থেকে মানুষকে কিছুটা মুক্তি বা স্বাধীনতা দিলো।
একথা তো অস্বীকার করার উপায় নেই যে,সভ্যতার নির্মাণে এবং সভ্যতাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে সাধারণ মানুষের বুদ্ধি বিবেক ও বিবেচনারও বড় ভূমিকা রয়েছে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন